বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মশিউর রহমান রনিকে নিয়ে সর্বত্রই আলোচনার ঝড়

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সীমানায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর ও আলীরটেক ইউনিয়নকে নতুন করে এই আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে এই আসনের ভৌগোলিক বিস্তৃতি যেমন বেড়েছে, তেমনি বদলে যাচ্ছে রাজনৈতিক সমীকরণও।
পূর্বে উল্লিখিত দুটি ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। নতুন সীমানা অনুযায়ী, সদর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত হয়েছে বর্তমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন। এই পুনর্বিন্যাসে নতুন নেতৃত্ব ও সম্ভাবনার নাম হিসেবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় উঠে এসেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি।
দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা মশিউর রহমান রনি নারায়ণগঞ্জের তরুণ প্রজন্মের কাছে একজন আইকনিক নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি শুধু সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতাই নন, বরং রাজপথের পরীক্ষিত সৈনিক হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। সরকারের নানা দমন-পীড়নের মধ্যেও তিনি রাজপথে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং বিভিন্ন সময় হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের ভাষ্যমতে, বিএনপির দুঃসময়ে যখন অধিকাংশ নেতা মাঠে ছিলেন না, তখন মশিউর রহমান রনি ছিলেন রাজপথের সামনের কাতারে। রাজনৈতিক হামলা-মামলা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এমনকি গুমের চেষ্টাও তার পথ রোধ করতে পারেনি। আন্দোলন-সংগ্রামে তার অগ্রণী ভূমিকা তাকে দলের অভ্যন্তরে যেমন শক্তিশালী অবস্থানে রেখেছে, তেমনি কর্মীদের মধ্যেও তৈরি করেছে আস্থা।
বিগত সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন নতুন সীমানা অনুযায়ী এই আসনের আওতায় থাকছেন না। অপরদিকে এই আসনের আরেক পরিচিত মুখ শিল্পপতি মোহাম্মদ শাহ্ আলম ২০১৯ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ও স্থানীয় সাংগঠনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দায়িত্ব ছেড়েছিলেন। তার রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা এবং দল থেকে দূরে সরে যাওয়া নিয়ে অনেক প্রশ্নও রয়েছে।
সেই প্রেক্ষাপটে নতুন সীমানাভুক্ত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আলোচনায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন মশিউর রহমান রনি। ত্যাগী, কর্মীবান্ধব এবং মাঠের পরীক্ষিত এই নেতাকে নিয়ে নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা দীর্ঘদিনের। অনেকেই মনে করেন, আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় এবং রাজনীতিতে তার ভূমিকা বিবেচনায় এই আসনে বিএনপির পক্ষ থেকে রনির মনোনয়ন পাওয়া এক রকম নিশ্চিত।
রনি শুধু নারায়ণগঞ্জে নয়, ঢাকাতেও আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে দলের প্রতি নিজের নিষ্ঠা প্রমাণ করেছেন। তার নেতৃত্বে বহুবার রাজপথে চমক দেখিয়েছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা। দলীয় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল কিংবা প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম- সব জায়গাতেই রনি ছিলেন অগ্রভাগে।
যুবদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সংগঠিত করেছেন। তার সাংগঠনিক দক্ষতার ফলে স্থানীয় যুবদল এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় এবং সংঘবদ্ধ।
দলীয় সূত্র জানায়, শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব নয়, ব্যক্তি রূপেও রনি একজন সহজ-সরল, কর্মীবান্ধব এবং সহানুভূতিশীল নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ বজায় রাখেন এবং সংকটে পাশে দাঁড়ান।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলের অভ্যন্তরে অনেকেই হঠাৎ করে সক্রিয় হয়েছেন এবং সংসদ সদস্য হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কিন্তু যারা দুঃসময়ে রাজপথে ছিলেন না, তাদের প্রতি কর্মীদের আস্থা কম। এর বিপরীতে মশিউর রহমান রনি সেই বিরল নেতাদের একজন, যিনি রাজপথে ছিলেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
এই কারণে নেতাকর্মীদের একটা বড় অংশ মনে করেন, রনিকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলে দল শুধু একজন জনপ্রিয় প্রার্থীই পাবে না, বরং মাঠ পর্যায়ে একটি ঐক্যবদ্ধ, সক্রিয় ও কর্মীপ্রাণ নির্বাচনী দলও তৈরি হবে।
সর্বশেষ রাজনৈতিক আলোচনায়ও দেখা যাচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মশিউর রহমান রনির নামটি প্রায় নিশ্চিত ধরা হচ্ছে। যদিও দলীয় মনোনয়ন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি, তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রনি অনেক আগেই শীর্ষে উঠে এসেছেন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, নতুন সীমানা অনুযায়ী পুনর্গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নেতৃত্ব পরিবর্তনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তাতে মশিউর রহমান রনি বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। তার রাজনৈতিক ত্যাগ, মাঠপর্যায়ের উপস্থিতি এবং সাংগঠনিক দক্ষতা তাকে প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রেখেছে। এখন দেখার বিষয়, দলীয় মনোনয়নে তার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে কবে ঘোষণা করা হয়।
আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...