রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০১:১৩ অপরাহ্ন

মির্জাগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী পাবেল গ্রেফতার

খবর প্রতিদিন রিপোর্ট / ৭৭ বার পঠিত
প্রকাশিত সময় : সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫

  • র‌্যাব-৮, পটুয়াখালী ক্যাম্প ও সদর ব্যাটালিয়নের যৌথ অভিযানে বরিশাল মহানগর কোতোয়ালী মডেল থানা এলাকা থেকে আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ নিয়াজ মোর্শেদ পাবেল (২৬) কে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে র‌্যাব-৮, সিপিসি-১ পটুয়াখালী ক্যাম্প এবং র‌্যাব-৮ সদর ব্যাটালিয়ন এর একটি যৌথ অভিযানিক দল স্কোয়াড্রন লিডার রাশেদ ও তার নেতৃত্বাধীন টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানাধীন “বেল্লাল টি অ্যান্ড ফ্রেশি জুস” দোকানের সামনে থেকে নিয়াজ মোর্শেদ পাবেলকে আটক করা হয়। গ্রেফতারকৃত নিয়াজ মোর্শেদ পাবেল  পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব সুবিদখালী এলাকার মৃত আনিসুর রহমানের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী বাজারে আবুল বাশার ওরফে আবু বেপারী নামে এক ব্যবসায়ীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল আবিদ, যিনি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের এলএলবি ২য় বর্ষের ছাত্র, তার পিতার দোকানে বসা থাকা অবস্থায় নিয়াজ মোর্শেদ পাবেল, সম্রাট,জাহিদ, এরা দোকানে এসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বলে আবিদ জানায়। আবিদ টাকা দিতে অস্বীকার করলে, ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে তারা আবিদএর বাসায়  অপর আসামি  বুসরাকে  আগে বাসায় পাঠিয়েপুনরায় চাঁদা দাবি করে। এসময় আসামিরা  ছুরি দিয়ে আবিদকে  ভয় ভীতি দেখিয়ে ১ লাখ টাকা জোরপূর্বক আদায় করে এবং সোকেজের ড্রয়ার ভেঙে ৬ আনা ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন (যার মূল্য প্রায় ৮০ হাজার টাকা) জোর  করে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় আবিদ ডাক চিতকার দিলে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে আসামিরা দ্রুত পালিয়ে যায়।  পালানোর সময় ১ নং আসামি সম্রাট  আহত হয়ে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর ফুপু জাহনারা বেগম (৬০) বাদী হয়ে মির্জাগঞ্জ  থানায় মামলা দায়ের করেন যার নং ২৬ ধারা  ৪৪৮/৩৮৫/৩৮৬/৩৮৭/৩২৩/৩৭৯/৫০৬(২) উক্ত মামলায় নিয়াজ মোর্শেদ পাবেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
  •  

    র‌্যাব জানায়, নিয়াজ মোর্শেদ একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী, যার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা  রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামিকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। র‌্যাব-৮, সিপিসি-১ পটুয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার রাশেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  ফিরে দেখা :

  • মাদকে গ্রাসে পতিত হয়েছে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার তরুণ-যুবক শ্রেণি। অনেকটা প্রকাশ্যেই রাখঢাক না করে প্রশাসনে চোখের সামনে মাদক ব্যবসা করছে মির্জাগঞ্জের মাদক সম্রাটখ্যাত নিয়াজ মোর্শেদ পাভেল হাওলাদার ও হিমেল হাওলাদার। পাভেল-হিমেল ভ্রাতৃদ্বয়ের মাদক ব্যবসা নতুন নয়। এলাকার সচেতন শ্রেণি একাধিকবার পাভেল-হিমেল ভ্রাতৃদ্বয়ের মাদক ব্যবসা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রসাশনের সাথে দেন-দরবার করলেও কোনো সুরাহা হয়নি। পাভেল-হিমেলকে একাধিকবার ইয়াবা-গাজাসহ গ্রেফতার করলেও পুলিশের দুর্বল ফরোয়াডিংয়ের বদৌলতে জামিনে বেরিয়ে আবার ফিরে যায়  মাদক ব্যবসায়।
  • মির্জাগঞ্জে মাদক ব্যবসার একচ্ছত্র অধিপতি পাভেল-হিমেলকে নিয়ে এলাকায় কথা চালু আছে- ‘ওরা সরকার পার্টি, ওরা সব সময়ই থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে সরকারি দলে।’ জানা যায়, পাভেল-হিমেলের পিতা আনিস হাওলাদার জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সক্রিয় থাকায় বিগত আওয়ামী আমলের পুরো ১৫ বছর আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে একালাকায় সন্ত্রাসে রাজত্ব কায়েম করেছেন। পিতার কাছে হাতেখড়ি নেয়া নিয়াজ মোর্শেদ পাভেল-হিমেলও কম যান না। ‘বাপকা বেটা’র মতো পাভেল-হিমেল দুই ভাই ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করে। এই দুই ভাইয়ের দাপটে সে সময় ছাত্রলীগের অন্যান্য কর্মীরাও এলাকায় টিকতে পারেনি। ছাত্রলীগ করার সুবাদে এরা সব সময়ই প্রশাসনের ‘নেক’ নজরে থেকে এলাকায় যা ইচ্ছে তাই করেছে। প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা করে কামিয়েছে অঢেল অবৈধ অর্থ। আর এই অবৈধ অর্থের জোরে ওরা প্রশাসনকে ‘পকেটে’ রেখেই মাদক ব্যবসা করে আসছিল।
    বিগত ৫ আগস্টে ২০২৪ ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন হলেও মির্জাগঞ্জে পাভেল-হিমেলের পতন হয়নি। সবকিছু ম্যানেজ করে মাদক ব্যবসায়ি এই ভ্রতৃদ্বয় পূর্বের মতই এলাকায় দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে করছে মাদক ব্যবসা। ওদের মাদকের ব্যবসা বন্ধে প্রশাসনের কোন উদ্যোগ নেই বলে এলাকাবাসী জানান।
  • একাধিক মামলার আসামি পাভেল-হিমেল : দাঙ্গা-হাঙ্গামাকারী, সন্ত্রাসী, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় ক্যাডার এই দুই ভাই। এদের নামে একাধিক মামলা থাকার পরও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

মামলার ফিরিস্তি: ১। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানায়, এফআইআর নং-৫, তারিখ-০৮ জুন, ২০২৪; জি আর নং-৫৬, তারিখ- ০৮ জুন। ধারা- ৪/৫ আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন, ২০০২ সংশোধনী ২০০৯; তৎসহ ১৪৩/৩২৩/৩২৫/৩০৭/৩৭৯/।
২। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার, এফআইআর নং-১২, তারিখ- ২০ জানুয়ারি, ২০২৫; জিআর নং-১২, তারিখ- ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫। ধারা- ৩৪১/৩৮৫/৩৮৬/৩৮৭/৩২৩/৫০৬(২)।
৩। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার, এফআইআর নং-৫, তারিখ- ০১ মার্চ, ২০১৯; জি আর নং-২৬, তারিখ-০৯ মার্চ, ২০১৯। ধারা  ১৪৩/৩৪৯/৩০৭/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩৭৯/২০৬।
৪। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার, এফআইআর নং-৩, তারিখ- ০৭ আগস্ট, ২০২৫; জি আর নং-১০৬, তারিখ- ০৭ আগস্ট, ২০২৫। ধারা- ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৫০৬(২)/৩৪।
৫। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার, এফআইআর নং-১৫, তারিখ- ২০ জুলাই, ২০২৪; জি আর নং-৮০, তারিখ- ২০ জুলাই, ২০২৪। ধারা-৩৬ (১) এর ১০(ক)/৪৬ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮।

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..
এক ক্লিকে বিভাগের খবর